মোঃ রাজন আহমদ:: ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল—সিলেট তথা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক শোকাবহ দিন। এই দিনে নিখোঁজ হন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা এম ইলিয়াস আলী। তাঁর এই রহস্যজনক গুম শুধু একটি পরিবার নয়, একটি আদর্শিক রাজনৈতিক পরিবারকেই চরম শোক ও অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয়।
ইলিয়াস আলী ছিলেন সিলেটের কোটি মানুষের হৃদস্পন্দন আমাদের আন্দোলনের প্রাণ, রাজপথের সাহসী কণ্ঠস্বর। কিন্তু যখন তিনি হঠাৎ করে নিখোঁজ হলেন, তখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে শঙ্কা—এই আদর্শিক যাত্রা বুঝি থেমে যাবে। ঠিক সেই সময়েই, দৃঢ় এক কণ্ঠে সামনে এসে দাঁড়ান একজন সংগ্রামী নারী—তাহসিনা রুশদীর লুনা (ম্যাডাম)। তিনি শুধুই একজন নিখোঁজ নেতার স্ত্রী ছিলেন না, তিনি হয়ে উঠেছিলেন সাহস, প্রত্যয়ের প্রতীক। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, আদর্শকে হত্যা করা যায় না—তাকে লালন করতে হয়, রক্ষা করতে হয়, প্রয়োজনে আত্মত্যাগ করে হলেও।
ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই শেখ হাসিনার সরকারের ফ্যাসিস্ট শাসনামলে যখন গুম, খুন, মামলা, হামলা ছিল প্রতিদিনের রাজনৈতিক বাস্তবতা, তখন লুনা ম্যাডাম সেই ভয়াবহ বাস্তবতার বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, এমনকি তার নির্বাচনী প্রার্থীতা বাতিলের পরেও তিনি কখনও মাথা নত করেননি। ভয়কে জয় করে তিনি রাজপথে ছিলেন, মানুষের পাশে ছিলেন—যেন এক নির্ভীক পথপ্রদর্শক।
এই সংকটের সময়েই কিছু সুবিধাভোগী ও চাটুকার শ্রেণির মুখোশ খুলে যায়। তারা দলের আদর্শ ত্যাগ করে নিজেদের স্বার্থে শত্রুর সঙ্গে হাত মেলায়। তারা হয়তো লেবাস পাল্টেছে, কিন্তু আদর্শ কখনও প্রতারণা সইতে পারে না। লুনা ম্যাডাম জানতেন এই মুখোশধারীদের স্বরূপ একদিন উন্মোচিত হবেই। তিনি সেই বিশ্বাস নিয়েই অনড় থেকেছেন।
বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরের মানুষের কাছে লুনা ম্যাডাম শুধু একজন নেত্রী নন তিনি একজন অভিভাবক। তিনি মানুষের দুঃখ-কষ্টের সাথী, তৃণমূলের আশ্রয়স্থল। তাঁর প্রতিটি সিদ্ধান্তে আমরা পেয়েছি আদর্শের মমতা, নেতৃত্বের দৃঢ়তা। তাঁর সাহসিকতা শুধু রাজনীতিকে বাঁচিয়ে রাখেনি, এটি অনেক তরুণ-কর্মীকে অনুপ্রাণিত করেছে।