স্টাফ রিপোর্টার:: দক্ষিন সুরমায় পুলিশের সিগনাল অমান্য করাসহ ওসিকে ঘুষের টাকা কম দেয়ায় ক্ষোভে পুলিশ বক্স ভাংচুর,অগ্নিসংযোগসহ বিস্ফোরক মামলার প্রধান আসামী করলেন সিএনজি চালক ফজলু মিয়া (২৭) ও দুই যাত্রীকে। ঘটনাটি ঘটে গত ৯মে শুক্রবার দক্ষিন সুরমা থানায়।
স্থানীয় সুত্র জানায়, গত ৮ মে বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক সাড়ে ১১ ঘটিকার সময় দক্ষিণ সুরমার বাইপাসের তারানা সিএনজি পাম্প থেকে ৩ জন পুরুষ ও ১ জন মেয়ে যাত্রী নিয়ে সিএনজি চালক ফজলু খালেরমূখ যাওয়ার উদ্দেশ্য রওয়ানা দিলে হুমায়ুন রশিদ চত্বর পার হওয়ার পর পুলিশ গাড়ী থামাতে সিগনাল দেয়। এ সময় সিএনজি চালক গাড়ীটি থামাতে একটু দেরী করে। তখন ডিউটিরত কদমতলী ফাঁড়ি পুলিশের এ এস আই বিদ্যুৎ সিএনজি চালক ও যাত্রীদের সন্দেহ মূলক আটক করে কদমতলী ফাঁড়িতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দক্ষিণ সুরমা থানায় হস্তান্তর করেন। থানায় রাতভর আটকে রেখে স্থানীয় পরিবহণ শ্রমিক নেতা সেলিম আহমদ এর মধ্যস্থতায় একটি লেনদেনের মাধ্যমে চালক ফজলুকে মুক্তি দিতে সম্মত হন ওসি মিজানুর রহমান। ঐ সময় চালক ফজলু মিয়ার এক নিকট আত্মীয় একটি খাকি খামের মধ্যে করে ওসি সাহেবের টেবিলে দিয়ে আসেন টাকা।
পরদিন শুক্রবার নামাজের পর থানায় গিয়ে ভোক্তভোগীর পরিবার জানতে পারেন চালক ফজলুকে না ছেড়ে কোর্টে চালান দেওয়া হয়েছে। অনেক খোঁজাখুজির পর জানতে পারেন ২০২৪ ইং সালের ৪ আগস্ট খোজারখলা পুলিশ বক্স ভাংচুর, বেআইনি অস্ত্র সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অগ্নিসংযোগ মামলায় চালক ফজলুসহ ৩ জনকে আসামী দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এই মামলার বাদী এস আই (নি:) মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন, মামলা নং ০৪/১৩৭ তারিখ ২২/০৮/২০২৪ইং, ধারা ১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৪৯/ ৩৩২/৩৫৩/ ৪৩৬ পেনাল কোড ১৮৬০। এই মামলায় কারো নাম উল্লেখ নেই,অজ্ঞাতনামা ৪০০/৫০০ জনকে আসামী করা হয়েছে। সেই মামলায় দক্ষিণ সুরমা থানার ধরাধরপুর গ্রামের আঙ্গুর মিয়ার পুত্র ফজলু মিয়া (২৭) কে ১ নাম্বার আসামী করা হয়েছে। তার স্থায়ী ঠিকানা—বি— বাড়ীয়া জেলার নাসিরনগর থানার কচুয়া গ্রামে। অভিযোগে ফজলু মিয়ার অতীতের বিভিন্ন মামলার রেফারেন্স দেখানো হয়েছে। অন্য দুই যাত্রীকে ২ ও ৩ নাম্বার আসামী করা হয়েছে।
ভোক্তভোগী পরিবারের দাবী যে ঘটনায় চালক ফজলু মিয়াকে আটক করা হয়েছে সেই বিষয়ে মামলা না দিয়ে অন্য মামলায় কেনো আসামী করা হলো? দেশে কি ন্যায় বিচার নাই? আওয়ামীলীগের সময় যে কাউকে যে কোন মামলায় আসামী করা হতো কিন্তু বর্তমান অন্তর্বতী সরকারের আমলে অন্যায়ভাবে কেন আসামী করা হবে? তারা আরো বলেন যে ছেলে—মেয়ের কারণে সন্দেহমূলক সিএনজি চালক ফজলুকে আটক করা হয়েছিল সেই ঘটনার যাত্রী ছেলে এবং মেয়েকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে অভিভাবকের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হলো। সেই সাথে সিএনজি’র মালিককে তার গাড়ী বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ চালক ফজলু এবং অন্য দুই যাত্রী বিনাদোষে জেল কাটছেন। ফজলুর দুটি শিশু সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন—যাপন করছেন তার স্ত্রী। স্বামীকে অন্যায়ভাবে জেলে পাঠানোর উপযুক্ত বিচার দাবী করেন তার স্ত্রী। বিষয়টি পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকতার্রা যেন তদন্তপূর্বক বিহীত ব্যবস্থা গ্রহন করেন।
সিএনজি চালক ফজলুর স্ত্রী কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন ওসি সাহেব আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন কিন্তু আমার স্বামীকে জেলে পাঠিয়েছেন। শুনেছি আমি যে টাকা দিয়েছি তা উনার মনপুত না হওয়ায় ক্ষোভে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় ১নং আসামী হিসেবে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন। এ ছাড়াও যাদের ছেড়ে দিয়েছেন তাদের কাছ থেকে কতো টাকা নিয়েছেন তা আমরা জানতে চাই। ন্যায় বিচার পেতে তারা আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
কদমতলী ফাঁড়ি ইনচার্জ এ এস আই বিদ্যুৎ জানান, গত ৮ মে রাত অনুমান সাড়ে ১১টার সময় সিএনজি চালক ফজলু মিয়াসহ চার যাত্রীকে সিগনাল অমান্য করায় তাদেরকে ফাঁড়িতে নিয়ে যাই এবং অফিসার ইনচার্জ মহোদয়কে বিষয়টি অবগত করলে তিনি তাদেরকে থানায় নিয়ে যেতে নির্দেশ দেন। আমি আর বেশী কিছু জানি না।
দক্ষিণ সুরমা থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন ওরা খারাপ লোক ওরা আমাদের ফাঁড়ি এবং বক্স ভাংচুর করেছে তাই তাদেরকে আসামী করা হয়েছে। ফজলু কতটুকো খারাপ তা আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না।
সিলেট পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিম জানান, কোন নিরীহ মানুষকে হয়রানী করার অভিযোগ পেলে ঐ পুলিশ কর্মকতার্র বিরুদ্ধে যথাযথ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।