নিজস্ব প্রতিবেদক:: দীর্ঘ ৩৫ বছর পর এক সপ্তাহের জন্য জৈন্তাপুরের চিকনাগুল ও দরবস্ত বাজার ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিলো জৈন্তাপুর উপজেলা প্রশাসন। তারই ধারাবাহিকতায় ২৮ মে প্রায় ৪৪ লক্ষ টাকায় চিকনাগুল ও ২ লক্ষ টাকায় দরবস্ত দাম হাকিয়ে প্রাথমিকভাব ইজারাদার নির্বাচিত হয়েছিলেন যথাক্রমে মঈনুল ইসলাম ও মাওলানা আবু হানিফ নামের দুই ইজারাদার।
দরবস্ত পশুরহাটে প্রতিদ্বন্দী না থাকায় একমাত্র ইজারাদারকে বুঝিয়ে দেওয়া হলেও চিকনাগুল পশুর হাট সর্বোচ্চ দরদাতা ইজারাদার মঈনুলকে বুঝিয়ে দিতেগেলে অপর ইজারাদারগন যারা দীর্ঘ ৩৫ বছর অবৈধভাবে ভোগদখল করছেন তারা ভূমির অনাপত্তি নিয়ে আপত্তি করেন, ফলে তাকে অস্থায়ী পশুর হাট বুঝিয়ে না দিয়ে ২৯ মে শনিবার সার্ভেয়ারের মাধ্যমে সরেজমিন পরিদর্শন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জ মিত্র চাকমা।
শনিবার ৩১ মে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জ মিত্র চাকমা’র সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন বাজারের পাশে খালি জায়গা না পাওয়ায় ইকবাল হোসেনকে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায় লিজ দেওয়া হয়েছে।
অথচ দীর্ঘ ৩৫ বছর যাবৎ ঐ চক্রটি সরকারের বিপুল পরিমান রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সিন্ডিকেট করে জোরপূর্বক ভোগদখলের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বাজার থেকে ৫০০ মিটার দূরে যদি লিজ দেওয়া হতো তাহলে সরকার ট্যাক্সসহ প্রায় ৫৪ লক্ষ টাকা এক সপ্তাহে রাজস্ব পেতো। বর্তমানে যেখানে অবৈধ বাজার চলমান রয়েছে সেখানে সিলেট- তামাবিল হাইওয়ের পশ্চিম দিকে সরকারী খাস ও বাগানের জমি জোরপূর্বক দখল করে লিজ গ্রহীতারা সেড বানিয়ে তাদের নিজের ভিট দাবী করছে। পূর্বদিকে তাদের নিজের জমি রয়েছে যেখানে পশু রাখার শেড আগে থেকেই তৈরি করা আছে। প্রশ্ন হচ্ছে যিনি লিজ পেয়েছেন তিনি কি তার জমাদেওয়া জমিতে পশুর হাট বসাবেন না পুরাতন বাজারে হাট বসাবেন। যদি পুরাতন হাটে বাজার বসান তাহলে এটা পরিস্কার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিজেদের দখলে বাজার রাখতে এবং সরকারের বিপুল পরিমান রাজস্ব ফাঁকি দিতে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কারণ নিলামের আগেই এই বাজার নিলামের নামে ৪০ লক্ষ টাকা ভাগবাটোয়ারা হয়েছে। যিনি বন্টন করেছেন তিনি বিএনপি নেতা মেম্বার মছদ্দর ২য় ইজারাদার, তার সাথে ছিলেন মাওলানা জহির উদ্দিন, যিনি নিজেকে ঐ এলাকার জমিদার মনে করেন, ওলামালীগ ঐ নেতা প্রকাশ্যে বলেছিলেন, তিনি ছাড়া এই হাট কেউ নিতে পারবেনা। শেষ পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসন তাহার গুটির চালে হেরে গেলো, জহির উদ্দিন জিতেগেলেন। চিকনাগুল বাজার লিজ পেয়েছেন জহির উদ্দিনগং এর অত্যান্ত কাছের মানুষ ২য় ইজারাদার মছদ্দরের ছেলে ইকবাল হোসেন। ঐ চক্র জমির অজুহাত দেখিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চাপে ফেলে লিজ বাগিয়েছেন। তাদের চাপে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকারের লস স্বীকার করে তাদেরকে পশুরহাট ইজারা দিতে বাধ্য হয়েছেন।
এব্যপারে সর্বোচ্চ দরদাতা মঈনুল ইসলাম এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন আমরা ৪৪ লক্ষ টাকা দিয়েও বাজার পাইনি। একটু দূরে দিলে সরকার অনেক টাকা পেতো। ইউএনও মহোদয় ব্যক্তিগত সুবিধা পেয়ে সরকারকে বিপুল পরিমান রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করে ইকবালকে ৩ লাখ ৫০ বাজার টাকায় ইজারা দিয়েছেন। আমরা জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে আদালতের হস্তক্ষেপ চাইবো।
এর আগে চিকনাগুল বাজার ইজারাদার ৮ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ দাম ৪৩ লক্ষ ৭০ হাজার ৫শত ৮৫ টাকা হাকিয়ে মঈনুল ইসলাম প্রাথমিকভাবে ইজারাদার নির্বাচিত হয়েছেন। এছারাও মছদ্দর ২০ লক্ষ ৫০ হাজার, সুহেল আহমদ ৫ লক্ষ ৫০ হাজার এবং ইকবাল হোসেন ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দাম হাকিয়েছেন অন্যদের বৈধকাগজ না থাকায় প্রথমেই বাতিল করা হয়। বাকী ৪ জনের মধ্যে ৩ জন মছদ্দর, সুহেল ও ইকবাল হোসেন পুরাতন সিন্ডিকেটের লোক। একমাত্র মঈনুল ইসলাম নতুন ইজারাদার ছিলেন।
উল্লেখ্য এর আগে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত ও চিকনাগুল দুটি পশুরহাট এক সপ্তাহের জন্য ইজারা দেওয়ার দরপত্র আহ্বান করেছিল জৈন্তাপুর উপজেলা প্রশাসন। এই দুটি বাজার অবৈধভাবে চলছে বলে জাতীয় দৈনিক বিকাল বার্তা, চ্যানেল ২৬, সময় টিভি বাংলা ও তালাশ টেলিভিশন ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছিলো।
এসব প্রতিবেদন প্রকাশের পর জেলা প্রশাসক জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিলাম আহবানের অনুমতি দেন। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলাম আহবান করেন।
সেই আহবানে সারা দিয়ে দুটি বাজার লিজ নিতে ৯ জন ইজারার অংশগ্রহণ করেন। ২৮ মে বুধবার দুপুর আড়াইটায় জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জ মিত্র চাকমা মহোদয় এর কার্যালয়ে সকল ইজারাদারদের উপস্থিতিতে দরপত্র খোলা হলে দেখা যায় দরবস্ত বাজারে মাত্র একজন ইজারাদার অংশ নিয়েছেন এবং বাকী ৮ জন ইজারাদার চিকনাগুল বাজারের নিলামে ভিন্ন ভিন্ন দাম হাকিয়েছেন। দরবস্ত বাজারে আর কোন ইজারাদার অংশ না নেয়ায় যিনি দরপত্র দাখিল করেছেন তিনি মাওলানা আবু হানিফ এবং এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব পেতে যাচ্ছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিলো।