নিজস্ব প্রতিবেদক:: পবিত্র ঈদুল আজহায়ও থেমে নেই অপরাধীরা, এবার নিরাপদ থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার নামে একজন গার্মেন্টস কর্মীকে হোটেলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে দক্ষিন সুরমা থানা পুলিশ ০২(দুই) জনকে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায় ধষণের শিকার ভিকটিম (৩০), একজন গার্মেন্টস কর্মী, ঢাকার একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন। তিনি গত ৭/০৬/২০২৫ খ্রিঃ রাত আনুমানিক ১০.০০ ঘটিকার দিকে
ঢাকা থেকে সিলেট কদমতলী বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছান। নিজ বাড়িতে ফেরার বাস না পেয়ে এবং আত্মীয়- স্বজন না থাকায় রাত্রীকালীন থাকার জন্য হোটেল খুঁজার সময় রাস্তায় রিফাত @ মুরাদ (২৫) এর সঙ্গে পরিচয় হয়। রিফাত @ মুরাদ (২৫) ভিকটিম (৩০)‘কে হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করে দিবে বলে রাত ১১টার দিকে ভিকটিম (৩০)‘কে কদমতলীর যমুনা মার্কেটের ২য় তলায় অবস্থিত ডায়মন্ড আবাসিক হোটেলের ১১৩ নম্বর কক্ষে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে গত ০৮/০৬/২০২৫খ্রিঃ রাত ৩টার দিকে হোটেল ম্যানেজার লুৎফর রহমান (৪৫) ভিকটিম(৩০) এর কক্ষের সামনে এসে দরজা খুলতে বলেন। ভিকটিম দরজা খুললে তিনি জোর করে ঢুকে ধাক্কা দিয়ে ভিকটিমকে বিছানায় ফেলে দরজা বন্ধ করে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে। বের হওয়ার সময় ভিকটিম (৩০)-কে বিভিন্ন ধরনের ভয়-ভীতি দেখিয়ে আসামি ২। খিজির আহমদ (৩৫), ৩। রিফাত @ মুরাদ (২৫), পিতা–সমছু মিয়া, মাতা–ছালেহা বেগম, সাং– জাজ, থানা–মৌলভীবাজার সদর, জেলা– মৌলভীবাজার এবং ৪। তানভীর (৩০)‘দের কক্ষে প্রবেশ করিয়ে ভিকটিমকে ভেতরে রেখে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। তখন আসামীরা কক্ষের ভেতর পালাক্রমে ভোর ০৬.০০ ঘটিকা পর্যন্ত ভিকটিম (৩০)‘কে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে। ভিকটিম (৩০) শোর-চিৎকার করলেও দরজাবন্ধ থাকায় কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসে নাই। একপর্যায়ে ভিকটিম (৩০) অসুস্থ হয়ে অজ্ঞান হলে আসামিরা তাকে ফেলে চলে যায়। ০৮/০৬/২০২৫খ্রিঃ সকাল ১০.০০টার দিকে হোটেল ম্যানেজার লুৎফর রহমান ভিকটিমকে হোটেলের বাইরে ফেলে রেখে যায়। পরে এক বাসস্টাফ ভিকটিম‘কে কদমতলী বাসস্ট্যান্ডে র্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্পে নিয়ে গেলে র্যাব দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ভিকটিমকে হেফাজতে নেয় এবং ভিকটিম এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত ০৮/০৬/২০২৫খ্রিঃ সন্ধ্যা ০৬.০০ ঘটিকায় ডায়মন্ড আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে আসামী হোটেল ম্যানেজার লুৎফর রহমান (৪৫), পিতা-আজাদ মিয়া, সাং-লালপুর, থানা-সুনামগঞ্জ সদর, জেলা-সুনামগঞ্জ, বর্তমানে-ম্যানেজার, ডায়মন্ড আবাসিক হোটেল, কদমতলী, থানা-দক্ষিণ সুরমা, জেলা-সিলেট, ও খিজির আহমদ (৩৫), পিতা-লালউল্লাহ, সাং-মোল্লাপাড়া, থানা-ওসমানী নগর, জেলা-সিলেট, বর্তমানে-নাইটগার্ড, ডায়মন্ড আবাসিক হোটেল, কদমতলী, থানা-দক্ষিণ সুরমা, জেলা-সিলেট‘দ্বয়কে গ্রেফতার করে। ভিকটিম (৩০)এর শারীরিক অসুস্থতার কারণে পুলিশ তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি বিভাগে ভর্তি করায়। ভিকটিমের অভিযোগের ভিত্তিতে দক্ষিণ সুরমা থানার মামলা নং-০২, তাং-০৯/০৬/২০২৫খ্রিঃ, ধারা-নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০(সংশোধনী/২০০৩) এর ৯(৩) রুজু হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়কে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হবে। অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।
উল্লেখ্য এর আগেও দক্ষিণ সুরমার কদমতলী ফাঁড়ি এলাকার আবাসিক হোটেল গুলোতে রমরমা দেহ ব্যবসা, প্রশাসন নীরব ভুমিকায় শিরোনামে সময় টিভি বাংলা ও জাতীয় দৈনিক বিকাল বার্তাসহ বিভিন্ন অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও কাযকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ। যার শেষ পরিনতি ৭জুন ২০২৫ইয়ং একজন গার্মেন্টসকর্মীকে হোটেল কক্ষে নিয়ে গণধর্ষণ। স্থানীয়দের অভিযোগ প্রভাবশালী মহল ও কতিপয় অসাধু পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করে আবাসিক হোটেলগুলোতে চলে অবৈধ পতিতা ব্যবসা । মাঝে-মধ্যে এসব হোটেলে অভিযান চালানো হলেও থামে না অপরাধমূলক কার্যকলাপ।
স্থানীয় লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,অনেক দিন ধরে এসব হোটেলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কিশোরীদের এনে অসামাজিক কার্যকলাপ চালাচ্ছে একটি প্রভাবশালী অপরাধী চক্র। প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে মালিক ও ম্যানেজাররা এসব অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে দেদারছে। মাঝে মধ্যে অভিযান হলে ম্যানেজার আটক হলেও মালিক কখনই আটক হয় না। ফলে বন্ধ হয় না অসামাজিক কার্যকলাপ।
এছাড়াও পতিতাবৃত্তির পাশাপাশি এসব হোটেলে সারারাত ধরে চলে জুয়ার আসর। স্থানীয় সূত্র জানায়, এসব হোটেলের ম্যানেজারের কাছে রয়েছে একটি বিশেষ কলিং বেল। পুলিশের উপস্থিতি টের পেলেই ম্যানেজার সেই বেল টিপে জুয়াড়িদের সতর্ক করে দেন এবং জুয়াড়ি ও খদ্দেররা সটকে পড়েন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,দক্ষিণ সুরমা পুলিশ ফাঁড়ি এলাকার, চাঁদনি ঘাটে হোটেল আল তাকদীর, কদমতলীর হোটেল তিতাস,হোটেল প্রবাস,হোটেল মার্টিন,হোটেল কয়েছ, হোটেল আল আকিব, হোটেল রুচি,হোটেল যাত্রী সেবা,হোটেল আকাশ, হোটেল ডায়মন্ড, পুরাতন রেল স্টেশন রোডের নিউ বিরতি,হোটেল পদ্মা,হোটেল মেঘনায় চলছে এসব অবৈধ কার্যকলাপ। এসব হোটেলে কমবয়সী নারী সপ্লাই দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ২ আওয়ামিলীগ নেতা নুরুদ্দীন রাসেল ও আবুল কাশেম রুমনের বিরুদ্ধে। ওরা প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রথমে নিজেরা ভোগ করে পরে যেসব হোটেলে পতিতা ব্যবসা হয় সেই সব হোটেলে বিক্রি করে দেয়।
এছাড়াও দক্ষিণ সুরমার ২৬ নং ওয়ার্ডের কুমিল্লাপট্টি , কদমতলী , বালুরমাট, পুরাতন রেলস্টেশন কলোনীসহ আরোও বিভিন্ন কলোনি এবং বাসায় অবাধে চলছে অসামাজিক কার্যকলাপ। মেতরপট্টিতে মাদক ব্যবসায়ী মজনু-রহিমার নেতৃত্বে চলে অসামাজিক কাজ। জিঞ্জিশাহ্ মাজার সংলগ্ন বাশপালা মার্কেটের পিছনে জুয়ারী আবুল কাশেমের সুরমা মহলে জুয়া-মাদক ব্যবসার পাশাপাশি চলে অসামাজিক কাজ। যেখান থেকে গত ২৬জুন চোরাই মোটর সাইকেল উদ্ধার করে দক্ষিন সুরমা থানা পুলিশ। বালুরমাটে জুয়ারী বাচনের নেতৃত্বে জুয়ার পাশাপাশি মাদক সেবন,বিক্রি ও কলোনীতে চলে অসামাজিক কার্যকলাপ।
কোকনের মাছের দোকানের উপরে বাবনা হোটেলের উপরে শিপন ও আছকরের নেতৃত্বে প্রতিদিন রাত ১১ টার পর থেকে ফজর পর্যন্ত জুয়া চলে।
দক্ষিন সুরমার সচেতন মহল এসব অপরাধীদের বিরোদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্তা নিতে ২০১৮ইং সালের ৯ জানুয়ারী সিলেটের তৎকালীন জেলা প্রশাসক বরাবরে স্বারকলিপি দিলেও আজ পর্যন্ত এসব অবৈধ কর্মকান্ড বন্ধে উদ্যোগ নেই।