নিজস্ব প্রতিবেদক:: গোয়াইনঘাট উপজেলায় সবক’টি নদী পথে ইউনিয়ন পরিষদের নামে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রশাসকেরা চাঁদাবাজির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে নদীপথ কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি।
উপজেলার কমপক্ষে ৭ টি ইউনিয়ন পরিষদের নামে প্রকাশ্যে চাঁদা আদায় করলেও গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন ও গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে বালু ব্যবসায়ী ও বালু শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বালু ব্যবসায়ী মোজাহিদ আলী, রফিক আহমদ, সুলতান আলীসহ অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী ও বালু শ্রমিকেরা জানায়- নৌকায় বালু উত্তোলনের পর গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলং, পশ্চিম জাফলং, মধ্য জাফলং, রুস্তুমপুর, বিছনাকান্দি, পশ্চিম আলীরগাঁও ও ডৌবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের নামে প্রতিদিন একটি নৌকা থেকে ২/৩ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। প্রতিটি ইউনিয়নের নামে আলাদা চাঁদা দেয়ায় শুধু ইউনিয়ন পরিষদের চাঁদা দিতে আমাদের পুরো দিন চলে যায়। ওই ৭ ইউনিয়নের নামে ভিন্ন স্থানে পৃথক চাঁদা দেয়ায় সারাদিন শ্রম দিয়ে আমরা লাভবান হতে পারছিনা। বিষয়টি নিয়ে আমাদের নেতারা গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন ও গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের কাছে একাধিকবার দারস্থ হয়েও কোনো সুরাহা পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, পিয়াইন,গোয়াইন ও চেঙ্গেরখাল নদী থেকে কোনো ধরণের বৈধতা না মেনে পাথর-বালু বোঝাই বার্জ-কার্গো ও নৌকা হইতে টেক্স আদায় করছে বেশক’টি চক্র। মূলত; নৌকাগুলো গোয়াইনঘাট উপজেলার অন্তর্ভুক্ত বালু মহালে সরকারের রাজস্ব দিয়ে বালু বোঝাই করে থাকে। কিন্তু এই চক্রটি কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে জোরপূর্বক ওই ৭ টি ইউনিয়ন পরিষদের নামে পৃথকভাবে টাকা আদায় করছে। এই চক্রটি নৌকা শ্রমিকদের উপর জলুম করে এবং নৌকা তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। একেকটি ভলগেট ও স্টিলের নৌকা থেকে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা করে আদায় করছে তারা।
বিছনাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক বদরুল ইসলাম ও রুস্তুমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন শিহাব জানান, ‘ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকার ট্যাক্স ইজারা দেওয়া হয়েছে।’ কিন্তু পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, মধ্য জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ লোকমান হোসেন, পশ্চিম আলীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলিম উদ্দিন, ডৌবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ও গোয়াইনঘাট উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্যাক্স আদায়ের জন্য কোনো ইজারা দেননি বলে দাবি করেছেন। অপর দিকে পশ্চিম জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মামুন পারভেজ মোবাইল ফোন রিসিভ করেন নি।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল বলেন, ‘গোয়াইনঘাটের নদী পথে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের নামে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে শুনেছি। তবে এখনো পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার রতন কুমার অধিকারী বলেন বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের নামে গোয়াইনঘাট নদীপথ থেকে চাঁদা আদায়ের খবর পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’