সময় টিভি বাংলা ডেস্ক :: সুনামগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা নাছির উদ্দিন চৌধুরীর অসুস্থতার সুযোগে তার বাড়িটি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে সৎভাইদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, তিন সৎভাইয়ের নামে দিরাই হাসপাতালসংলগ্ন বাড়িটি গোপনে দলিল করা হয়। দ্বিতীয় স্ত্রী ও দুই মেয়ে চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় আনার পর বিষয়টি প্রকাশ পায়। সৎভাইদের এমন আচরণে মুষড়ে পড়েছেন প্রবীন এই রাজনীতিবিদ।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সৎভাই মাসুক চৌধুরী, মিজান চৌধুরী ও মিলন চৌধুরীর নামে বাড়িটি গোপনে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। প্রতারণার মাধ্যমে এভাবে বাড়ি হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে নাছির চৌধুরী নিজেই দিরাই উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর আবেদন করে নামজারিসহ পরবর্তী সহায়তা চেয়েছেন। এসি ল্যান্ডকে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে নাছির উদ্দিন চৌধুরী শনিবার বলেন, আমি গুরুতর অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি আছি। সৎভাইয়েরা উপজেলা সদরের বাড়িটি আমার দুই মেয়ের নামে লিখে দেওয়ার কথা বলে স্বাক্ষর নিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, দিরাইয়ের বাড়ি থেকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও দুই মেয়ে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসার পর তিনি কিছুটা সুস্থ হন। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তার বাড়ির যে দলিল হয়েছে সেটা তার মেয়েদের নামে নয়, সৎভাই মাসুক, মিজান ও মিলনের নামে হয়েছে। এরপরই তিনি এই বাড়ির ভূমি নামজারি থেকে শুরু করে সব কার্যক্রম বন্ধের জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর চিঠি দিয়েছেন। তবে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তাকে জানানো হয়নি বলে তিনি জানান। এই দলিল বাতিল করতে আইনিভাবে আবেদনও করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে দিরাই উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ সূত্রধর বলেন, তিনি নাছির চৌধুরীর আবেদন পেয়েছেন। তবে পরদিনই ছুটিতে যাওয়ার কারণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। ছুটি থেকে ফিরেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সনজীব সরকার। অভিযোগের বিষয়ে মাসুক চৌধুরী বলেন, দলিল লিখে নেওয়া হয়েছে বিষয়টি এমন নয়। তবে ভাইয়া (নাছির চৌধুরী) এসি ল্যান্ডকে যে চিঠি দিয়েছেন সে বিষয়ে অবগত আছি।
হাওর এলাকার প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ নাছির উদ্দিন চৌধুরী। ১৯৯৬ সালে সুনামগঞ্জে-২ আসন থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে বর্ষীয়ান পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেন গুপ্তকে হারিয়ে জাতীয় রাজনৈতিক নেতাদের নজর কাড়েন। এর আগে দুবার উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। সুনামগঞ্জ বিএনপিকে শক্তিশালী করতে নিরলস কাজ করেছেন তিনি। সবশেষ জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মনোনীত হন। এ অবস্থায় হঠাৎ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ছিলেন দিরাইয়ের নিজ বাড়িতে। সেখানে তার সুচিকিৎসা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। ১৭ এপ্রিল শয্যাশায়ী এই রাজনীতিবিদকে দেখতে গিয়ে সৎভাইদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তার দুই মেয়েসহ দ্বিতীয় স্ত্রী। তারপরই নজর পড়ে স্থানীয় প্রশাসনের। তাকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে এমন অভিযোগ করেন স্ত্রী ও দুই মেয়ে।
তার দুই মেয়ে নাজিয়া চৌধুরী ও নাদিয়া চৌধুরী অভিযোগ করেন, তাদের বাবা নাছির চৌধুরীকে আটকে রেখে সব সম্পত্তি নিজেদের নামে স্থানান্তর করছেন তার সৎভাইয়েরা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নাছির চৌধুরী তার বাবার প্রথম স্ত্রীর একমাত্র সন্তান। পরে তার বাবা আবার বিয়ে করেন। তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সংসারে মাসুক চৌধুরী, সেলিম চৌধুরী, মিজান চৌধুরী, নাসিমা চৌধুরী ও মিলন চৌধুরীর জন্ম। পৈতৃকভাবে অনেক সম্পত্তির মালিক এই পরিবার। নাছির চৌধুরী অসুস্থ হওয়ার পর ঠিকভাবে তার চিকিৎসা হয়নি।
সূত্র : যুগান্তর