
হাসান জুলহাস:: সিলেট নগরীর স্টেশন রোডের রেলগেইট পয়েন্টে বেপরোয়া ও অপরিণামদর্শী চালকদের কারণে যানজট ও জনদুর্ভোগ নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ট্রাফিক আইন অমান্য করে যত্রতত্র যানবাহন দাঁড় করিয়ে রাখায় এই এলাকায় প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত তীব্র যানজট দেখা দিচ্ছে। কোনো কোনো দিন এ যানজটের সময় আরও বেড়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে, তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো উদাসীন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রেলগেইট এলাকা নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথ। প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ এ রুট দিয়ে সিলেট শহরে প্রবেশ করেন। অধিকাংশ যানবাহন কাজিরবাজার ব্রিজ ব্যবহার করলেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গাড়ি স্টেশন রোড ও রেলওয়ে এপ্রোচ রোড দিয়ে শহরে প্রবেশ করে।
পুরাতন স্টেশনে প্রবেশ বা ক্রসিং-এর জন্য পশ্চিম পাশে আসলে রেলগেইট বাধ্যতামূলকভাবে বন্ধ রাখা হয়। সেই সময় উভয় দিকে দীর্ঘ সারিতে অপেক্ষমাণ যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি না থাকায় মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও অন্যান্য গাড়ি দুই লেন দখল করে বিশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। এ থেকেই সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজট।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, দিনের পর দিন বেপরোয়া চালকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় চালকদের মধ্যে আইন মানার প্রবণতা কমছে এবং বিশৃঙ্খলা বেড়েই চলছে।
কদমতলীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকেও নিয়মভঙ্গের ঘটনা নিয়মিত দেখা যাচ্ছে। জেলা সড়ক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (RTA) নির্দেশনা অনুযায়ী সকল আন্তঃজেলা বাসের বাইপাস সড়ক হয়ে চন্ডিপুল পয়েন্ট ব্যবহার করে শহর ত্যাগের কথা। কিন্তু বিপুলসংখ্যক বাস নিয়ম অমান্য করে অপরিসর স্টেশন রোড ব্যবহার করছে। এতে অতি দ্রুতই যানজট তৈরি হচ্ছে, অথচ পরিবহন মালিক সমিতি বা শ্রমিক ইউনিয়নের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই।
পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের যুক্তি সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. মইনুল ইসলাম বলেন—“নিয়ম অনুযায়ী সব গাড়িকেই বাইপাস সড়ক ব্যবহার করতে হয়। তবে কোনো সময়ে বাইপাসে সমস্যা দেখা দিলে যাত্রীদের সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছানোর স্বার্থে স্টেশন রোড ব্যবহার করা হয়। বিনা প্রয়োজনে যাতে এই রুট ব্যবহার না করা হয়, সে বিষয়ে শ্রমিকদের নির্দেশনা দেওয়া হবে।”
এ বিষয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) রাখী রাণী দাস বলেন—
“বিষয়টি আমাদের নজরে ছিল না। আপনাদের কাছ থেকে জানলাম। রেলগেইট ও কাজিরবাজার ব্রিজ সংযোগস্থলে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।”
সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া সমস্যা সমাধান নয় নগরবাসীর মতে, ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন, নিয়মিত নজরদারি, রুট নির্ধারণে কঠোরতা এবং চালকদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা ছাড়া রেলগেইট ও আশপাশের যানজট কোনোভাবেই কমানো সম্ভব নয়। দিনে দিনে অব্যবস্থাপনার মাত্রা বাড়তে থাকায় শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথটি এখন মানুষের দুর্ভোগের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।